হোলি উৎসব কেনো পালন করা হয়? হোলি এর ইতিহাস আজই জানুন।

                      বসন্ত মানেই কোকিলের সুমধুর কন্ঠ স্বরের মাতামাতি। বসন্ত উৎসব বসন্ত মানে প্রেমিক প্রেমিকার মিলনের শুভক্ষণ। আর বসন্তকে রঙিন করতে কোকিলের কুহু ডাকে রংয়ের ডালি নিয়ে হাজির হয় বাঙালির প্রিয় উৎসব হোলি। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবাই এই রঙের উৎসব উপভোগ করেন।


হোলির দিন সমস্ত মানুষ একে অপরকে নানান রঙে রাঙিয়ে তোলেন। আর এভাবেই তারা মনের আনন্দ প্রকাশ করেন। হোলি সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে অথবা চৈত্রের প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব শুধু যে রঙের উৎসব তা নয় অশুভ শক্তির বিনাশের উৎস হিসাবে হোলি কে বিবেচনা করা হয়। 

                     


  হোলি নিয়ে এক পৌরাণিক ইতিহাস আছে। কথিত আছে এক সন্ত্রাসী রাক্ষস রাজা ছিলেন তার নাম ছিল হিরণ্য কশ্যপ। তিনি ভেবেছিলেন সারা বিশ্বকে নিজের শাসনাধীন করবেন। এজন্য তিনি মানুষকে ভয় দেখাতেন এবং মানুষকে বলে বেড়াতেন যে তিনি ঈশ্বর এবং ঈশ্বর হিসাবে তার পূজোর জন্যে তিনি মানুষকে জোর করতেন। প্রাণ রক্ষার্থে মানুষ তার পুজো করতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হিরণ্য কশ্যপ এর এক পুত্র ছিল যার নাম ছিল প্রহল্লাদ। বাবার অহংকারের কারণে পহলাদ বাবাকে ঠিক মেনে নিতে পারতেন না। কশ্যপ পুত্র বলতেন যে পুরো সংসার বাবাকে পুজো করে ভক্তিতে নয় ভয় পেয়ে। অর্থাৎ তারা পরোক্ষভাবে  কশ্যপকে বিপথে চালিত করছেন। অহংকারের পথে চালিত করছেন। তিনি তাই বিষ্ণুর  ভক্ত ছিলেন। নিজের ছেলের এই আচরণে পিতা হিরণ্য কশ্যপ ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন। ধীরে ধীরে পুত্রের প্রতি তার ঘৃণাও জন্মাতে লাগল এবং তিনি অহংকারে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে বহুবার নিজের ছেলেকে পর্যন্ত হত্যা করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকবারই ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয় তাকে রক্ষা করতেন। 

                     পুরাণে কথিত আছে  কাশ্যপের এক বর ছিল। যার বলে কেউই তাকে কোনোভাবেই হত্যা করতে পারবে না। অতএব এমন বরের বলে তিনি দেবতা দানব কাউকে ভয় পেতেন না। চিন্তাভাবনা না করে যেকোনো স্থানে নিজের প্রতিপত্তি বিস্তারে আগ্রহী হতেন। হিরণ্য কশ্যপ এর হোলিকা নামে এক বোন ছিল যিনি বর পেয়েছিলেন কোনদিন আগুনে দগ্ধ হবেন না। দাদার দুঃখে দুঃখী হয়ে বোন একদা দাদাকে পরামর্শ দিলেন যেহেতু তিনি আগুনে পুড়বেন না, তাই প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে প্রবেশ করবেন। আর এতে প্রহল্লাদ আগুনে ছাই হয়ে যাবে। নির্বোধ প্রহ্লাদকে নিয়ে হোলিকা  আগুনের মধ্যে প্রবেশ করলেন। আর নিমেষে হোলিকা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন। ব্রহ্মার বরদান মত যেহেতু হোলিকা অন্যের ক্ষতির জন্য ব্রহ্মার বর ব্যবহার করেছিলেন তাই বরদান কোন কাজে লাগেনি। এভাবেই হোলিকা নামক অশুভ শক্তির বিনাশ হয়েছিল। তাই এখনো অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য প্রত্যেক বছর হোলিকা দহন হয়। 

                     আমরা জানি হোলিকা দহন এর পর রং নিয়ে খেলার এক পুরনো প্রথা প্রচলিত আছে। পুরাণে কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হোলির দিনে রং খেলার প্রথা শুরু করেছিলেন। বৃন্দাবন ও গোকুলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বন্ধু ও গোপীদের সাথে রং নিয়ে হোলি যাপন করতেন। আর তখন থেকেই হোলি উৎসব হিসেবে পালন করা শুরু হয়। এছাড়াও হোলিতে রং লাগানো মানে একে অপরের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুভূতির প্রকাশ করা। একে অন্যের গায় রং লাগিয়ে শত্রুতার চিরঅবসান সম্ভব ও মৃদু হাসিতে ভালোবাসার  প্রকাশ হয়। 



                       হোলিতে রং এর ব্যবহার  বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে তবে আপনি কি জানেন প্রাচীনকালে হোলিতে যে রং ব্যবহার করা হত তা পলাশ গাছের ফুল থেকে তৈরি হতো। ওই সময়ে গুলার নামে পরিচিত ছিল। আর ঐ রঙ মোটেও ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর ছিলনা। কিন্তু বর্তমান দিনে আর পলাশ গাছের ফুল থেকে রং তৈরি হয় না। রং তৈরীর জন্য বিভিন্ন রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা ত্বকের ক্ষতি করে এবং অন্যান্য সম্পর্কিত রোগের আবির্ভাব ঘটায়। আমরা যতটা সম্ভব কম রাসায়নিক রং ব্যবহার করব এবং আনন্দের সাথে রঙের উৎসব উদযাপন করবো। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.